হিন্দুধর্মে পূজা করার জন্য কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করা হয়। এ সকল নিয়মনীতিগুলোকে পূজাবিধি বলে। প্রতিমা, ঘট, পট (ছবি), মণ্ডল, শালগ্রাম, পুস্তক, শিবলিঙ্গ ও জল এ আটটি বস্তুর যে- কোনো একটি বস্তুতে পূজা করা যায়। এ আটটি বস্তুকে পূজার আধার বলে। এ কারণে পূজার আধার হিসেবে এগুলোর কোনো-না-কোনোটির ব্যবহার দেখা যায়। পূজা করার মৌলিক দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে দেব-দেবীর আবাহন, ধ্যান, প্রাণপ্রতিষ্ঠা, পূজামন্ত্র পাঠ, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রার্থনামন্ত্র পাঠ, প্রণামমন্ত্র পাঠ ও বিসর্জন। এ ছাড়াও যে কোনো পূজা করার পূর্বে পঞ্চদেবতার পূজা করা হয়। পঞ্চদেবতা হচ্ছেন: শিব, বিষ্ণু, সূর্য, অগ্নি ও কালী। পূজা করার জন্য বেশকিছু সাধারণ বিধি বা নিয়ম-নীতি রয়েছে। নিচে কিছু কিছু বিধির উল্লেখ করা হলো-
১. আসনশুদ্ধি ও আচমন : এ বিধি অনুসারে পূজা করার পূর্বে পূজার উপকরণসমূহ শুদ্ধি করে নিতে হয়। শুদ্ধি করা বলতে দোষমুক্ত করাকে বোঝানো হয়। এ ক্ষেত্রে আসনশুদ্ধি, জলশুদ্ধি, করশুদ্ধি, পুষ্পশুদ্ধি করে পূজার ঘট স্থাপন করতে হয়। অতঃপর আচমন করতে হয়। আচমন বলতে হাত, পা, চোখ পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে বিশুদ্ধ জল তিনবার পান করতে হয়। এ সময় নির্দিষ্ট মন্ত্র পাঠ করতে হয়। আচমনের সাথে ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করতে হয়। অতঃপর স্বস্তিবাচন। স্বস্তিবাচন বলতে শুভকামনা বোঝানো হয়। সাধারণত পুরোহিত পূজার শুরুতে যে শুভ বা মঙ্গল কামনা করেন তাকে স্বস্তিবাচন বলে।
২. সংকল্প গ্রহণ: এ বিধি অনুসারে সঠিকভাবে পূজাকার্য সম্পাদনের জন্য সংকল্প গ্রহণ করতে হয়। সংকল্প শব্দের অর্থ প্রতিজ্ঞা বা দৃঢ় ইচ্ছা।
৩. পূজায় অভীষ্ট দেব-দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো, চক্ষুদান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা: পূজার প্রথম বিধি অনুসারে নির্দিষ্ট দেব-দেবীর প্রতিমা বা পট নির্দিষ্ট করে পূজা ও প্রার্থনা গ্রহণের জন্য হৃদয় দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিশ্বাস করা হয়, অভীষ্ট দেব-দেবী নির্দিষ্ট প্রতিমার মধ্যে অবস্থান করছেন। প্রতিমায় চক্ষু দান করে নিতে হয়। অতঃপর অভীষ্ট দেব-দেবীর উদ্দেশে বিশেষ মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৪. অভীষ্ট দেব-দেবীর ধ্যান, পূজামন্ত্র পাঠ, পুষ্পাঞ্জলি, প্রার্থনা, আত্মসমর্পণ ও নমস্কার প্রদান : এ বিধি অনুসারে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে দেব-দেবীর উদ্দেশে ধ্যান, পূজা, পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, প্রার্থনা ও প্রণাম করা হয়। পূজা কার্যক্রমে কোনো ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা প্রার্থনা এবং দেব-দেবীর কাছে আমাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য আত্মসমর্পণ করা হয়। দেব-দেবীর পূজা করার জন্য এ বিধিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. আরতি প্রদান ও বিসর্জন: এ বিধি অনুসারে অভীষ্ট দেব-দেবীর উদ্দেশে আরতি প্রদান করা হয়। আরতির সময় অভীষ্ট দেব-দেবীর কাছে আমাদের ভিতর ও বাইরের সকল খারাপ দিকসমূহ দূর করে দেয়ার জন্য কপূর প্রজ্বলিত করে প্রার্থনা করা হয় এবং সকল পূজারিকে আশীর্বাদ প্রদান করা হয়। এ বিধির মাধ্যমে অভিষ্ট দেব-দেবীর ওপর আমাদের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশেষে অভীষ্ট দেব-দেবীর প্রতিমাকে বিসর্জন দেয়া হয়।
এ ছাড়াও পূজার সংকল্প গ্রহণ, একটু একটু করে জল পান করার জন্য জল সমর্পণ, দেব-দেবীকে অলংকার সমর্পণ, ছাতা সমর্পণ, পাখা (চামর) বিসর্জন প্রভৃতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
উপচারের ভিত্তিতে পূজার প্রকারভেদ: সাকাররূপে দেব-দেবীর পূজা বিভিন্ন উপচার অনুসারে বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে।
পঞ্চোপচার পূজা: উপচার শব্দের অর্থ উপকরণ। পঞ্চোপচার পূজা পাঁচটি উপকরণের মাধ্যমে করা হয়। গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য এ পাঁচটি পঞ্চোপচার পূজার উপকরণ।
দশোপচার পূজা: দশোপচার পূজা দশটি উপকরণের মাধ্যমে করা হয়। পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য-এ দশটি দশোপচার পূজার উপকরণ।
ষোড়শোপচার পূজা: আসন, স্বাগত, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, স্নানীয়, বসন, আভরণ, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য ও বন্দনা- এ ষোলটি উপকরণ দিয়ে ষোড়শোপচার পূজা করা হয়।
অঞ্চলভেদে পূজাবিধির কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা যায়। তবে সাধারণ ভাবে সকল অঞ্চলের পূজাপদ্ধতি একই রকম।
একক কাজ: পূজার সাধারণবিধিসমূহ লেখ। |
Read more